প্রবাদ আছে, ‘পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি’। পরিশ্রমের দ্বারা ভাগ্যের চাবিকাঠি এমনভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব।যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতার প্রথম শর্ত হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম। আর এই ইচ্ছে শক্তি আর পরিশ্রমকে সম্বল করে মধ্যবিত্ত ছা পোষা বাঙালি ছেলে আজ এক ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা। সমস্ত বিশ্বসেরা সংস্থাদের হারিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রশেখর ঘোষ। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকায় বিনিয়োগ ব্যবসা ছিনিয়ে আনল বাংলার বন্ধন।
মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা আইডিএফসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কিনল বন্ধন ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম। দেশ-বিদেশের নানান নামীদামী সংস্থার সামনে থেকে ব্যবসা ছিনিয়ে নিয়ে এল বাংলার এই সংস্থা। বলা হচ্ছে ভারতের বিনিয়োগ বাজারে এর চেয়ে বড়ো হস্তান্তর এর আগে কখনও হয়নি। মাত্র সাত বছরের মধ্যে সাফল্যের এই চূড়ান্ত শিখরে কীভাবে পৌছালেন তিনি?
আগরতলার এক বাংলাদেশি পরিবারে জন্ম তার। বাবার মিষ্টির দোকান ছিলো। সেখানেই কাজ করতেন তিনি। দোকান পরিষ্কার করা, জলখাবার তৈরি করা সমস্ত কাজই করতেন তিনি। তারপর কোনোরকমে স্কুলে ছুটতেন। এরপর বাংলাদেশ থেকে পাড়ি দেন কাকার কাছে। ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন আর অদৃষ্টের ফেরে সেই বছরই পরলোক গমন করেন তার বাবা।
সেই সময় একটি আন্তর্জাতিক এনজিও-র কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি এবং কাজের সময় দারিদ্র, ক্ষুদার অমানবিক দিকটি নজরে আসেন তার। দারিদ্র্য, অনাহার, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষগুলোকে দেখে তিনি বুঝতে পারেন শুধুমাত্র অনুদান দিয়েই এই মানুষ গুলোর সাহায্য করা যাবেনা। আয় বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়। এরপর ব্যাঙ্ক থেকে দু লক্ষ টাকা লোন নিয়ে তার নিজস্ব এনজিও ‘বন্ধন’ শুরু করেন। স্ত্রী নীলিমা ছিলেন তার সঙ্গী। এই প্রসঙ্গে চন্দ্রশেখর বলেন, “আমার কাছে দু’টিই পথ খোলা ছিল, বন্ধনকে সফল রূপ দেওয়া অথবা আত্মহত্যা করা।”
২০০৬ সালে, চন্দ্রশেখর বন্ধনকে ‘বন্ধন ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড’ নাম দিয়েএকটি নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থায় (NBFC) পরিণত করেন। এরপর বহু ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে ২০০৭ সালে ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ৫০ টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্ধন ভারতে ১ম এবং বিশ্বে ২য় স্থান দখল করে। এরপর ২০১৪ সালে “ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক” বন্ধনকে এনজিও থেকে ব্যাঙ্কের লাইসেন্স দেয়। স্বাধীনতার পরে বন্ধন প্রথম সংস্থা যাকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক লাইসেন্স দিয়েছে।
এরপর ২০১৪ সালে ২৩ ডিসেম্বর থেকে ব্যাঙ্ক হিসেবে বন্ধনের পথচলা শুরু। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি চন্দ্রশেখরকে। এক বছরের মধ্যেই ভারতের ২৭টি রাজ্যে ৬১৫টি শাখা এবং ২০৫টি এটিএম পরিসেবা চালু করে বন্ধন। আজ বন্ধনের গ্রাহক সংখ্যা ১.৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এবার এই সংস্থা বৃহত্তর ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে চলেছে। ভারতীয় বাজারে যখন বিশ্বের তাবড় তাবড় সংস্থা ব্যবসা খুলতে চাইছে, তখন মাত্র সাত বছর আগে শুরু হওয়া একটি সংস্থার এই জয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এমনটাই মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
অর্থনৈতিক দুনিয়ায় এই চুক্তি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এইচডিএফসি, আইসিআইসিআই, স্টেট ব্যাঙ্কের মতো নানান সংস্থার সাথে পাল্লা দিয়ে শূন্য থেকে শুরু করা বন্ধন ব্যাঙ্ক এই চুক্তি ছিনিয়ে নিয়েছে যা ভারতীয় অর্থনীতিতে বিনিয়োগ দুনিয়ায় হওয়া সবচেয়ে বড় চুক্তি।
সংগৃহীত।
Tags:
News