এরা হোমো ফ্লোরেন্সিস, মানুষের এক অবলুপ্ত প্রজাতি। মাত্র ৬০০০০ বছর আগেও এরা বেচে ছলো , ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেন্স দ্বীপে। একই সময় পৃথিবীতে বাস করছিলো আরো তিন প্রজাতির মানুষ - হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্স ( মানে আমরা বা আমাদের পূর্বপুরুষরা ), ইয়োরোপে ও পশ্চিম এশিয়াতে হোমো নিয়ান্ডারথালেন্সিস ( বা নিয়ান্ডারথাল মানুষ, যারা ছিলো প্রায় মানুষ, প্রায় আমাদেরই মতো কিন্তু আলাদা মুনুষ্য প্রজাতি) , আর উত্তর এশিয়ায় সাইবেরিয়ায় হোমো ডেনিসোভানিয়ান্সিস।।
তখন তুষার যুগ তার চরম অবস্থায়। সারা উত্তর গোলার্ধ ও বিশ্বের এক বিশাল অঞ্চল পুরু বরফের আচ্ছাদনে ঢাকা। পাথরের কুড়ুল, পাথরের ছুরি, বরশা, পাথরের ফলা বসানো তীর দিয়ে এই চার মুনুষ্য প্রজাতি শিকার করছে হাতির চেয়ে বড়ো ম্যামথ, বল্গা হরিন, দানবীয় এল্ক হরিন, গুহা ভল্লুকদের।। ইয়োরোপের কঠিন ঠান্ডায় চলছে মানুষের নানা প্রজাতির বাচার লড়াই আর আমাদের পূর্ব পুরুষ হোমো সেপিয়েন্স সেপিয়েন্সদের সাথে নিয়ান্ডারথালদের লড়াই। হোমো ফ্লোরেন্সিসরা ছিলো দূরভাগ্যের শিকার। তূষার যুগের শেষের দিকে তাপমাত্রা ভাড়ার সাথে সাথে সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতা বাড়তে থাকে। দুনিয়ার নানা স্থানে ছডিয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র দ্বীপের মতো ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেন্স দ্বীপ বিছিন্ন হয়ে পড়ে মূল স্থলভাগ থেকে। ছোটো দ্বীপের গন্ডিতে আটকে পড়ে হোমো ফ্লোরেন্সিস মানুষরা। খাদ্যের ভান্ডার সীমিত। এই ভাবে হাজার হাজার বছর ধরে অল্প খাদ্যের ভরসায় জীবন ধারন করতে করতে প্রাকৃতিক নির্বাচন এদের বানিয়ে দেয় খরবাকৃতি। এদের গড় উচ্চতা ছিলো সাড়ে তিন ফুট। এখনো অবধি সবচেয়ে ছোটো মানুষ। আফ্রিকার পিগমী বা বুশম্যান দের থেকে ছোটো। কিন্তু ছোট্ট হলেও এরা ছিলো নিপুন শিকারী এবং এরা দারুন অস্ত্র বানাতে পারতো। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রমান পেয়েছেন হোমো ফ্লোরেন্সসিস মানুষররা ইন্দোনেশিয়ার অধুনা অবলুপ্ত পিগমী হাতি শিকার করতো খাদ্যের জন্য।
এই সবচেয়ে ছোটো ও বুদ্ধিমান মানুষের প্রজাতি আজ অবলুপ্ত। জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা বলছেন মাত্র ৪০ হাজার বছর আগে এরা অবলুপ্ত হয়েছে। কারন অজানা। প্রাকৃতিক নির্বাচন যাদের বাচিয়ে রেখেছিল, প্রকৃতিই তাদের হনন করেছে।
কি অদ্ভুত লাগে মানুষের এই আত্মীয়দের কথা ভাবলে।