এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং পিইটি স্ক্যান—এগুলো সবই বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল ইমেজিং পদ্ধতি, যা শরীরের ভেতরের অবস্থা জানতে সাহায্য করে। আপনার দেওয়া তথ্যগুলো সঠিক, এবং আমি সেগুলোকে আরও গুছিয়ে এবং সহজভাবে তুলে ধরছি। এখানে প্রতিটি পদ্ধতির মূল পার্থক্যগুলো সংক্ষেপে দেওয়া হলো।
এক্স-রে (X-ray)
এক্স-রে একটি দ্রুত এবং সহজ ইমেজিং পদ্ধতি যা প্রধানত হাড়ের ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি এক্স-রে বিকিরণ ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের একটি দ্বিমাত্রিক (2D) ছবি তৈরি করে।
* উপকারিতা: এটি খুব দ্রুত হয় এবং খরচ কম। হাড় ভাঙা (fracture), ফুসফুসের সংক্রমণ (যেমন নিউমোনিয়া), বা কিছু টিউমার শনাক্ত করার জন্য এটি আদর্শ।
* সীমাবদ্ধতা: এটি নরম টিস্যু, যেমন পেশি বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছবি ভালোভাবে দেখাতে পারে না। এতে সামান্য পরিমাণে বিকিরণ ব্যবহৃত হয়।
সিটি স্ক্যান (CT Scan)
সিটি স্ক্যান (কম্পিউটেড টমোগ্রাফি) হলো এক্স-রের একটি উন্নত সংস্করণ। এটি শরীরের চারপাশের বিভিন্ন কোণ থেকে অসংখ্য এক্স-রে ছবি তোলে এবং একটি কম্পিউটার সেগুলোকে একত্রিত করে শরীরের ভেতরের একটি ত্রিমাত্রিক (3D) ছবি তৈরি করে।
* উপকারিতা: এটি হাড়ের পাশাপাশি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, রক্তনালী এবং টিস্যুর বিস্তারিত ছবি দিতে পারে। এটি জরুরি পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ আঘাত বা রক্তক্ষরণ শনাক্ত করার জন্য খুবই কার্যকর।
* সীমাবদ্ধতা: এক্স-রের চেয়ে এতে অনেক বেশি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়।
এমআরআই (MRI)
এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পদ্ধতি। এটি শক্তিশালী চুম্বক এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের ছবি তৈরি করে, কোনো বিকিরণ ব্যবহার করে না।
* উপকারিতা: এটি নরম টিস্যু, যেমন মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, পেশি, লিগামেন্ট এবং কার্টিলেজ পরীক্ষা করার জন্য সবচেয়ে নির্ভুল পদ্ধতি।
* সীমাবদ্ধতা: স্ক্যানটি বেশ সময়সাপেক্ষ এবং সিটি স্ক্যানের চেয়েও বেশি ব্যয়বহুল। যাদের শরীরে ধাতব যন্ত্র (যেমন পেসমেকার) আছে, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
পিইটি স্ক্যান (PET Scan)
পিইটি স্ক্যান (পজিট্রন এমিশন টমোগ্রাফি) একটি কার্যকারিতা-ভিত্তিক পরীক্ষা। এতে সামান্য পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যা শরীরের সক্রিয় কোষগুলোকে চিহ্নিত করে।
* উপকারিতা: এটি ক্যান্সার কোষের কার্যকলাপ, টিউমারের বিস্তার এবং চিকিৎসায় শরীর কতটা সাড়া দিচ্ছে তা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে। এটি ক্যান্সার ছাড়াও স্নায়ু এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়।
* সীমাবদ্ধতা: এটি প্রধানত মেটাবলিক কার্যকলাপ দেখায়, শরীরের গঠন বা অ্যানাটমি নয়। প্রায়শই পিইটি স্ক্যানের সাথে সিটি বা এমআরআই স্ক্যান করা হয়, যাতে কার্যকারিতা এবং গঠন উভয়ই দেখা যায়।
দ্রুত সারসংক্ষেপ
* এক্স-রে: হাড়ের জন্য দ্রুত এবং সস্তা।
* সিটি স্ক্যান: এক্স-রের চেয়ে বিস্তারিত, জরুরি অবস্থার জন্য ভালো, কিন্তু বেশি বিকিরণ ব্যবহার করে।
* এমআরআই: বিকিরণমুক্ত, নরম টিস্যুর জন্য সবচেয়ে নির্ভুল, তবে ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ।
* পিইটি স্ক্যান: কোষের কার্যকলাপ (যেমন ক্যান্সার) বিশ্লেষণ করে।