১৪ জন দেবদেবীকে এক বেদীতে প্রতিস্থাপন করে যে পূজা অনুষ্ঠান হয় সেটি ‘খার্চী পূজা’ নামে পুরো ভারতবর্ষে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে৷ চতুর্দশ দেবদেবী প্রতিস্থাপিত মন্দিরকে অভিহিত করা হয় ‘চতুর্দশ দেব মন্দির’৷ ত্রিপুরা জাতির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা ‘ত্রিপুরাব্দ’ অনুসারে প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি থেকে আগরতলার চতুর্দশ দেব মন্দিরে খার্চী পূজা শুরু হয় এবং সাত দিনব্যাপী চলে পূজা অনুষ্ঠান৷ ত্রিপুরা রাজ্যের অধিবাসী ত্রিপুরিরা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আড়ম্বর সহকারে ‘খার্চী পূজ্যোত্সব’ উদ্যাপন করে থাকে৷
ত্রিপুরা রাজ্যের সবচেয়ে প্রাচীন পুজো হল খার্চি পুজো। ১৪ জন দেবতার পুজোর মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের শুভ সূচনা হয়ে থাকে। খার্চি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল, খার ও চি। খার কথার অর্থ হল পাপ এবং চি কথার অর্থ হল পরিষ্কার বা মোচন করা। এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে এক কথায় পাপ মোচন করা হয়। আগরতলার চতুর্দশ দেবতাবাড়িতে ৭ই জুলাই থেকে শুরু হয় খার্চি পূজা, চলে টানা সাত দিন। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লঅষ্টমী তিথিতে এই পুজো শুরু হয়।
এই পুজোতে যে চতুর্দশ দেবতাকে পুজো করা হয় তাঁরা হলেন— হর বা শিব প্রধান দেবতা, উমা বা দুর্গা, হরি, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কুমার বা কার্তিক, গণেশ, ব্রহ্মা, পৃথিবী, সমুদ্র, গঙ্গা, অগ্নি, কামদেব, হিমাদ্রি। সকলেই ত্রিপুরা রাজাদের কুলদেবতা। ৭ দিন ধরে হাজারো ভক্তের সমাগম হয় মন্দির প্রাঙ্গণে। এই পুজোর একটি বৈশিষ্ট্য হল দেবতাদের পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে পুজো না হয়ে শুধুমাত্র দেবতাদের মাথা গুলিকে পুজো করা হয়।
পুরোহিতদের সঙ্গে পুলিশ বাহিনী ব্যান্ড বাজিয়ে চৌদ্দ দেবতার স্নানে অংশ নেয়। কয়েক শত বছর ধরে এভাবে প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে পুরাতন আগরতলার চৌদ্দ দেবতার মন্দিরে বাৎসরিক খার্চি পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রাজন্য আমলে ত্রিপুরার রাজবাড়ী যখন পুরাতন আগরতলায় ছিল তখন থেকে এই খার্চি পূজা প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তী সময় রাজবাড়ী বর্তমান আগরতলায় চলে এলেও রাজাদের কুলদেবতার মন্দির রয়ে যায় পুরাতন আগরতলায় এবং প্রতি বছর খার্চি পূজা উপলক্ষে উৎসব ও মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে।
রাজপরিবারের পুরোহিতকে বলা হয় চন্তাই। রাজন্য আমলে রাজা সৈন্যরা খার্চি পূজার সময় চতুর্দশ দেবতাকে গার্ড অফ অনার জানাতেন। এই প্রথা এখনও প্রচলিত রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্য ভারত ভুক্তির পর ত্রিপুরা পুলিশ এই মন্দিরের উৎসবের সময় ১৪ জন দেবতাদেরকে গার্ড অফ অনার জানান।