তিনি বিশ্বকবি, তিনি লেখক, তিনি গায়ক, তিনি অভিনেতা, তিনি অঙ্কন শিল্পী, এমনভাবেই তিনি যে আরও কত কি তার বোধহয় বলে শেষ করা যাবে না। আর এমন বিস্ময়কর বহুমুখী প্রতিভার কারণেই তিনি বিশ্ব বন্দিত।
এতবড় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হয়েও তিনি আর পাঁচটা ছাপোষা বাঙালির মতই ছিলেন খাদ্য রসিক। পরিমাণে কম খেলেও বাহারি খাবারের প্রতি আকর্ষণ ছিল ষোল আনা। এক্সপেরিমেন্ট করে নিত্য নতুন পদ তৈরির পরামর্শ তিনি মাঝে মধ্যেই দিতেন স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে। আর বিশ্বকবির আবদার রাখতে কোন দ্বিমত করেন নি রবি ঠাকুরের আদরের ছুটি।
একবার কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনে ফিরবেন কবি। সঙ্গে আসবেন স্ত্রী মৃণালিনী দেবী। সেখানে গিয়ে কবিকে মনের মত রেঁধে খাওয়াবেন বলে হাতা, খুন্তি, পিঠের ছাঁচ ইত্যাদি গুছিয়ে নিচ্ছেন মৃণালিনী দেবী। কবি তা দেখে চিৎকার করে বলেন, ওহ শান্তিনিকেতন হচ্ছে যাজ্ঞবল্ক্য মুনির আশ্রম। সেখানে একান্ন হবিষ্যি খেয়ে দিন চলে যায়। এত জিনিস বয়ে নিয়ে যেতে হবে না।
কিন্তু সেদিন রবির ছুটি সেকথা শোনেন নি। ছুটি চেনেন তাঁর স্বামীকে। অতিথি এলেই তাঁকে কী খাওয়াবেন তা নিয়ে বিশ্বকবির চিন্তা শেষ হয় না। মানুষটা নিজে কম খেলেও নানা পদ, মিষ্টি খেতে ও খাওয়াতে খুব ভালোবাসেন। তার উপর আবার মৃণালিনী দেবী পূর্ব বঙ্গের মেয়ে। রান্নায় তাঁর হাতযশ ভালোই। ছুটির হাতের চিঁড়ের পুলি খেতে ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। তাই মৃণালিনী দেবী রান্নার সব সরঞ্জাম নিয়ে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে।
কবির মাথায় নিত্য নতুন লেখনীর মত নতুন নতুন রান্নার আইডিয়া আসত প্রায়শই। আর সেই মত তিনি রান্নার নির্দেশ দিতেন স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে। আইডিয়া যদি সফল হত তাহলে আর কবির আনন্দ ধরে রাখে কে। এমনি একবার কবি স্ত্রীকে বললেন আলু ও কড়াইশুটি সেদ্ধ করে মেখে বড়া ভাজতে। স্ত্রী বললেন এতে ময়দা বা বেসন দিতে হবে। কবিগুরু বললেন না। মৃণালিনী দেবী বললেন ময়দা বা বেসন না দিলে বড়া ভাজা যাবে না। কে কার কথা শোনে। রবিঠাকুর বললেন আলবাৎ যাবে।
আধ কড়াই তেল নিয়ে কবি বড়া ভাজতে বসলেন। যতবার কড়াইতে বড়া ছাড়েন তত বার বড়া ছড়িয়ে যায়। গোল আর হয় না। এবার কবিও হেসে ফেললেন। তবু গম্ভীর ভাবে কবি বললেন , এমনটা হওয়ার কিন্তু কথা ছিল না। হ্যাঁ, এই সমস্ত কিছু নিয়েই তিনি রবীন্দ্রনাথ। বিশ্ব বরেণ্য কবি। কারণ তাঁর রান্না কখনো সখনো সফল না হলেও তাঁর কলম সবর্দা সফল। তাঁর কলম বাঙালির মননে, তাঁর লেখনী প্রভাবিত করে বাঙালির জীবনের প্রতি মূহুর্তে। তাঁর মত মহামানব বাঙালির চির অহঙ্কার চির গর্বের।