ক্রিসমাস ড ডে হল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি বার্ষিক উৎসব। ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। তবে এই দিনটিই যে যিশুর প্রকৃত জন্মদিন তা সঠিক করে জানা যায় না তবে ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের জন্মকে স্মরণ করেই আনন্দে মেতে ওঠেন তারা। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস পূর্বে মেরির গর্ভে প্রবেশ করেন যিশু। সম্ভবত, এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ ধরা হয়। বিশেষ করে, যিশুর অবতারের মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীতে ঈশ্বরের উপস্থিতির স্মৃতি ও আশীর্বাদে বড়দিনের গুরুত্ব প্রকাশ পায়। যীশু খ্রীষ্টের প্রকৃত জন্ম তারিখ অজানা, তবে ৪র্থ শতাব্দী থেকে ২৫ ডিসেম্বর দিনটিকেই ক্রিসমাস প্রতীকীভাবে উদযাপন করা হয়েছে।উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণ অয়নান্ত দিবসের অনুষঙ্গেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখে যিশুর জন্মজয়ন্তী পালনের প্রথাটির সূত্রপাত হয়। খ্রিষ্ট ধর্মে বারো দিনব্যাপী খ্রিষ্টমাসটাইড অনুষ্ঠানের সূচনাদিবস এই ২৫ ডিসেম্বর।
বিজ্ঞানীরা ঠিক কখন খ্রীষ্টের জন্ম হয়েছিল তা নিয়ে একমত হতে পারে না। ক্রিসমাসের শুরুর সঠিক পরিস্থিতি যা আমরা জানি তা প্রায় একরকম অন্ধকারেই রয়ে গেছে। শীতকালীন অয়নকালের আগে এবং পরে ২৫ ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি তৃতীয় শতাব্দীর ক্রোনোগ্রাফ আবিষ্কার হয়েছিল।যেখানে খ্রিস্টের জন্মের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দিন সহ বসন্ত এবং শরতের অন্যান্য তারিখগুলিও প্রস্তাব করা হয়েছে।
পশ্চিমী চার্চে খ্রিস্টের জন্ম উদযাপনের সবচেয়ে প্রাচীন রেকর্ডটি ৩৫৪টি রোমান ক্রোনোগ্রাফে (বা ক্রোনোগ্রাফ), যা ফিলোক্যালিসম (Phyllocalism) ক্যালেন্ডার নামেও পরিচিত। এই ইয়ারবুকের রেকর্ডএর অনুসারে ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বড়দিন পালন করা হয়, ক্যাথলিক রাজা কনস্ট্যানটাইনের আমলে।৩৩৬ সালে রোমান চার্চ খ্রিস্টের জন্মের স্মরণে একটি ভোজ উদযাপন করেছিল এই ২৫ ডিসেম্বরেই। এর কয়েক বছর পর ৩৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি পোপ জুলিয়াস ঘোষণা করেন ২৫ ডিসেম্বর উদযাপন হবে ক্রিসমাস হিসেবে।
ভারতবর্ষে প্রথম ক্রিসমাস পালন করা হয় ১৬৬৮ সালে। জব চার্নক প্রথম বড়দিন পালন শুরু করেছিলেন বলে শোনা যায়।
যিশুর জন্ম ধরেই খ্রিস্টাব্দের হিসেব করা হয়। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, তার এক বছর আগে জন্মেছিলেন যিশু। তবে বড়দিন ঘিরে দ্বিমত রয়েছে জুলিয়ান ও গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জিতেও। অনেক অর্থোডক্স ও কপ্টিক চার্চ এখনো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বদলে জুলিয়ান দিনপঞ্জি অনুসারে ৭ জানুয়ারি বড়দিন পালন করে।
প্রাচীন রোমানরা ছিলেন প্রকৃতির পূজারী। তাই অনেকেই ভাবেন এই রোমান পেগানরাও যাতে উৎসবে মেতে উঠতে পারেন সেই কথা ভেবেই ২৫ ডিসেম্বর পালন করা হয় বড়দিন। কিন্তু এই তথ্যের স্বীকৃতি দেয় না ইতিহাস। ইতিহাস বলে, খ্রিস্টানরা পেগান ধর্মকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায়নি। বরং সবসময়ই একটু দূরত্বে থাকার চেষ্টা করেছে।
আবার রোমান পঞ্জিকা অনুসারে, ২৫ মার্চ মেরী জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। সেইদিনই আবার ক্রুশবিদ্ধ করে যিশুকে হত্যা করা হয়। এর থেকে ৯ মাস পরই আসে ২৫ ডিসেম্বর।তাই সেই হিসেব মিলিয়েও দিনটির সূচনা করা হয়েছে তা বলাই যায়